বাংলাদেশের বন্যাঃ মানব সৃষ্ট বিপর্যয়ের কালো ছায়া।

 বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ । যখন কোনো জলাধারের পানি তার ধারণ ক্ষমতা অতিক্রম করে এবং অতিরিক্ত পানি শুষ্ক ভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেটাই বন্যা হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের মতো নদীমাতৃক দেশে বন্যা একটি সাধারণ ঘটনা পরিণত হয়েছে, তবে এর প্রভাব অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক হতে পারে।

bangladesh flood
photo: Dailystar

বন্যার কারণঃ

অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতঃ

বাংলাদেশের বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের ৭০-৮০ শতাংশ বৃষ্টিপাত বর্ষাকালেই হয়। বন্যার প্রধান কারণ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত। মাটির শোষণ ক্ষমতা পূর্ণ হয়ে গেলে বৃষ্টির পানি নদীতে এসে মিশে যায় এবং নদীর পানি বেড়ে যায়। যখন নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা অতিক্রম করে, তখন তা আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং বন্যা সৃষ্টি করে। এই বন্যাকে (Monsoon flood) বন্যা বলা হয়, অর্থাৎ মৌসুমি বন্যা। বাংলাদেশে মৌসুমি বন্যা জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে হয়। অতিবৃষ্টিপাতের ফলে মাটি পানি শোষনের ধারনক্ষমতা হারনোর পর প্রধান নদীগুলো এবং তাদের শাখাগুলোতে প্রচুর পরিমানে পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে বন্যা দেখা যায়। 

১৯৮৮ সালের বন্যাঃ

১৯৮৮ সালের বন্যায় বাংলাদেশের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। তবে এই বন্যার পানির মাত্র ২০ শতাংশ বাংলাদেশের বৃষ্টির ফলে এসেছিল; বাকি ৮০ শতাংশ পানি ভারত থেকে প্রবাহিত হয়ে এসেছিল। এটি প্রমাণ করে যে, শুধু দেশীয় বৃষ্টিপাত নয়, পার্শ্ববর্তী দেশের পানি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের বন্যার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

আকস্মিক বন্যা (Flash flood)-ঃ

প্রাকৃতিকভাবে পানি উচ্চ স্থান থেকে নিম্ন স্থানে প্রবাহিত হয়। অধিকাংশ নদীর উৎপত্তি হয় পাহাড় বা পর্বতে, যেখানে বৃষ্টি এবং বরফ গলে পানি সঞ্চিত হয় এবং নদীর মাধ্যমে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়।দেশের দক্ষিন-পূর্ব এবং উত্তর পূর্ব পাহাড়ি নদীগুলোতে আকস্মিক বন্যা হয়। এই বন্যার বৈশিষ্ট্য হলো পানি  অতিদ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং উজান থেকে ভাটির দিকে প্রবল স্রোতে প্রবাহিত হয়। এই বন্যায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সম্প্রতি ভারত ডুম্বুর বাধ খুলে দিলে বাংলাদেশের ফেনী ,কুমিল্লা, নোয়াখালী,চাঁদপুর জেলা ভয়াবহ বন্যার শিকার হয়। 


সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যার জন্য ভারত দায়ী।বাংলাদেশের নদীগুলোর প্রায় সবগুলোর উৎপত্তি বাংলাদেশের বাহিরে। বাংলাদেশ ভোগলিক ভাবে ভাটির দেশ। তাই উচু ভূমির বৃষ্টিপাত আমাদের প্লাবিত করে। যখন বাংলাদেশ এবং ভারতে একসাথে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশের খাল, নদীনালায় পানির চাপ থাকবে বাধগুলো তার ধারনক্ষমতা হারাবে।আর্ন্তজাতিক আইন অনুযায়ী কোনো অভিন্ন নদীর  জলের উপর একছত্র দখল উজান বা ভাটিতে থাকা কোনো দেশের থাকতে পারে না।  কোনো প্রকল্প শুরু করার আগে তার প্রভাব খতিয়ে দেখা আর ভাটি অঞ্চলের দেশে তার কতটা প্রতিঘাত পড়বে, সেটা তাদের জানিয়ে দেয়া। কিন্ত ভারত আগ্রাসী আচরণের পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশেকে ন্যায্য হিস্যা না দিয়ে ভারত ৩০ টি নদিতে বাধ দিয়ে গেছে ইচ্ছে মতো। কোনো আন্তজাতিক আইনের তোয়াক্কা করে নি। পানি নিয়ে ভারতের রাজনীতি আর আগ্রাসন নীতি বরাবরের মতো আবারো প্রমান করল উজানের দেশ ভারত।  

শেখ হাসিনা: স্বৈরতন্ত্রের উত্থান ও পতনের উপাখ্যান আর্টিকেল টি পড়তে ক্লিক করুন।

ফারাক্কা বাঁধ: একটি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের আড়ালে লুকানো বিপর্যয়।

ফারাক্কা ব্যারেজ
Photo: Jagonews24

ফারাক্কা বাঁধ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় গঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত একটি বাঁধ। এটি ১৯৬১ সালে নির্মাণ শুরু হয় এবং ১৯৭৫ সালে সম্পন্ন হয়। মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতায় নির্মিত এই বাঁধের লক্ষ্য ছিল কলকাতা বন্দরের পলি জমার সমস্যা সমাধান করা। বাঁধটি গঙ্গার শাখানদী ভাগীরথীর সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে হুগলি নদীতে পানি প্রবাহ বজায় রাখার উদ্দেশ্যেই নির্মিত হয়। ফারাক্কা বাঁধের ফিডার খালের দৈর্ঘ্য ২৫ মাইল এবং এর মধ্য দিয়ে গঙ্গার বিপুল পরিমাণ পানি হুগলি নদীর দিকে প্রবাহিত হয়।

কিন্তু এই উন্নয়নমূলক প্রজেক্টের আড়ালে রয়েছে একটি বিশাল পরিবেশ বিপর্যয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বাঁধ গঙ্গার প্রাকৃতিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে উজান ও ভাটি অঞ্চলের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে এই বাঁধের ফলে ভয়াবহ বন্যা, নদী ভাঙ্গন, এবং জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও, শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য, বনজ, এবং নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। পশ্চিম বঙের তকালীন প্রকোশলী কপিল ভট্টাচার্য এই প্রকল্প পরিকল্পনার শুরুতে বি্রোধিতা করে বলেন "ফারাক্কা বাঁধ সবার জন্যই মরণফাদ "।

ভাষানীর ফারাক্কা আন্দোলন: ইতিহাসের পাতায় বঞ্চিত কণ্ঠস্বর

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর নেতৃত্বে ১৯৭৬ সালে সংগঠিত ফারাক্কা লং মার্চ ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তখন তার বয়স ছিল ৯০ বছরের বেশি।বয়সের ভারে মাওলানা ভাষানীর শরীর দূর্বল হলেও প্রতিবাদের ভাষা একটুও দূর্বল হয় নি। তিনি অসুস্থতা সত্ত্বেও হাসপাতাল থেকে ফিরে ঘোষণা দেন, যদি ভারত বাংলাদেশকে পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তাহলে তিনি লং মার্চ করবেন।

১৬ই মে, ১৯৭৬ সালে রাজশাহী থেকে ফারাক্কার উদ্দেশ্যে লং মার্চ শুরু হয়। হাজারো মানুষ তার ডাকে সাড়া দেয়। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি এই আন্দোলনের কারণ ব্যাখ্যা করেন। লং মার্চটি রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ৬৪ মাইল অতিক্রম করে।

ভাষানীর এই সাহসী পদক্ষেপ আজও তার অনুসারীদের কাছে এক অনুপ্রেরণা হিসেবে বিবেচিত হয়। ৯০ বছর বয়সে তার এই অসামান্য নেতৃত্ব ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে রয়েছে। ফারাক্কা বাঁধের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে তার সতর্কবাণী আজও প্রাসঙ্গিক।

ফারাক্কার প্রভাব: সবুজ থেকে ধূসর

পদ্মার পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের অববাহিকায়, বিশেষ করে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৮-১৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। মৌসুমী বৃষ্টিপাতও এই স্তরে পর্যাপ্ত রিচার্জ করতে পারছে না। সেচের জন্য এখন দ্বিতীয় স্তর (>৩০০ ফুট) ব্যবহার করা হচ্ছে, যা বরেন্দ্র অঞ্চলে মূলত ফসিল পানির ওপর নির্ভরশীল। সেচের কারণে মাটির আর্দ্রতা শুষ্ক মৌসুমে ৩৫% কমে গেছে, যা মরুকরণের সূচনা বলা চলে। নদীর পানি থেকে জলীয় বাষ্প সৃষ্টির অভাবে, অঞ্চলের বায়ুর আর্দ্রতা হ্রাস পাচ্ছে, ফলে তাপমাত্রার তারতম্য বেড়ে যাচ্ছে, যা মরুকরণের বহিরাবরণে পরিণত হচ্ছে।

নাব্যতা হারানো নদী ও লবণাক্ত মাটির বোঝা:

ফারাক্কা বাঁধের ফলে বাংলাদেশের গড়াই নদী এখন সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত। পদ্ম নদীর নাব্যতা কমে গিয়ে বর্তমানে বিপর্যস্ত।  বাংলাদেশে বড় বড় বন্যার হবার এটী অন্যতম একটি কারণ। ফারাক্কা বাঁধের ফলে বাংলাদেশের সুন্দরবনে সমুদ্রের পানি ঢুকে মাটি লবনাক্ত হয়ে মাটি তার উর্বরতা হারাচ্ছে। বাংলাদেশের সুন্দরবনে বনাঞ্চল কমে যাওয়ার জন্য এটি দ্বায়ী। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন খুলনা জেলার রুপসা নদীর প্রতি লিটার পানিতে  ৫৬৩.৭৫  মিলিগ্রাম ক্লোরাইড আয়ন উপস্থিতি রয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলের জি-কে সেচ প্রকল্পের অবস্থা অত্যন্ত বিপর্যস্ত। পানির স্তর ব্যাপকভাবে নেমে যাওয়ায় এই প্রকল্প মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সেচযন্ত্রগুলো হয় বন্ধ হয়ে আছে, অথবা সেগুলোর উপর তাদের ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি চাপ পড়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১২১,৪১০ হেক্টর জমি রয়েছে। মাটির আর্দ্রতা হ্রাস, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং মিঠা পানির অপ্রাপ্যতার কারণে কৃষিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হচ্ছে।  [তথ্যসুত্র]

জলবায়ুর পরিবর্তন: তিস্তা বাঁধের ফলে ভারতের উত্তরাঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত

পশ্চিমবঙ্গের জন্যও ফারাক্কা বাঁধ বড় রকমের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফারাক্কার জেরে গঙ্গার উজানে যে পলি পড়া শুরু হয়েছে, তারে কারনে  বছরই বর্ষার মরশুমে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ছে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের একটা বিস্তীর্ণ অংশ॥ বহুদিন ধরেই মালদহ-মুর্শিদাবাদ জেলার গঙ্গা তীরবর্তী দুর্ভোগ ও বিপর্যয়কবলিত মানুষ ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।  শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, পার্শ্ববর্তী বিহারও ফারাক্কা বাঁধের কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিহার রাজ্য সরকারের দাবি, ফারাক্কা বাঁধের কারণেই এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং প্রায় প্রতিবছরই রাজ্য বন্যা ও নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ফারাক্কা সমস্যার সমাধানের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এর স্থায়ী সমাধানের জন্য বেশ সরব।


বন্যার প্রতিকার ও প্রস্তুতি

বন্যা প্রতিরোধে ইকো-ফ্রেন্ডলি সমাধান: নদী ও খাল সংরক্ষণ

বন্যা প্রতিরোধে ইকো-ফ্রেন্ডলি সমাধান হিসেবে নদী ও খাল সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নদী ও খাল বন্যার পানি ধারণ করে ভূমি ও জনজীবন রক্ষা করে এভাবে বন্যা মোকাবেলায় এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। এছাড়া শহরের ড্রেইন গুলো নিয়মিত সংস্কার করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার দিকে গুরত্ব দেয়া উচিত। এদের সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে, ভূমির উপরের জলাশয় গুলি স্থিতিশীল থাক বেএবং বৃষ্টির পর অতিরিক্ত পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে আসবে। খাল ভরাট বা নদী দখল করলে এই প্রাকৃতিক পানি প্রবাহের স্বাভাবিক পথ ব্যাহত হয়, যা বন্যার ঝুঁকি বাড়ায়। সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশে স্থানীয় প্রভাবশালী দ্বারা নদী, খাল দখল এবং ভরাট হচ্ছে।  তাই, নদী ও খাল সংরক্ষণ, অবৈধ দখল মুক্ত রাখা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি সচেতনতা বাড়ানো আমাদের বন্যা প্রতিরোধের একটি ইকো-ফ্রেন্ডলি সমাধান।
স্বল্প মাত্রার বন্যা থেকে শহর রক্ষাঃ

শহরকে বন্যা থেকে রক্ষা করার জন্য নদীর দুই পাশে রক্ষা বাঁধ তৈরি করা, খাল ও নদী দখলমুক্ত রাখা, এবং ড্রেনগুলি প্রশস্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও পূর্বপ্রস্তুতির মাধ্যমে বন্যার ক্ষতি কমানো সম্ভব।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা;

অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে ভারতের সাথে ন্যায্যতার ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। কোনো প্রকল্প শুরু করার আগে তার প্রভাব ভাটি অঞ্চলের দেশে কতটা পড়বে, তা বিবেচনা করা উচিত এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। 

আন্তসীমান্ত নদী এবং পানি বণ্টনের সমস্যাঃ

বাংলাদেশের ৫৭টি আন্তসীমান্ত নদী রয়েছে, যার মধ্যে ৫৪টি ভারতের সাথে এবং ৩টি মায়ানমারের সাথে। এই নদীগুলোর পানির ন্যায্য বণ্টনের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা প্রয়োজন। ন্যায্যতার ভিত্তিতে এই সমস্যা মীমাংসা করা উচিত, যাতে উজান থেকে আসা পানি বাংলাদেশের জন্য ক্ষতির কারণ না হয়।

ভারতের সাথে পানির সমস্যা এবং কূটনৈতিক সমাধান

ভারতের পানি আগ্রাসন
ভারত ৩০টিরও বেশি নদীতে বাঁধ তৈরি করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করেছে। কোনো আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে ভারত এই বাঁধগুলো নির্মাণ করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনছে।
টিপাইমুখ বাঁধ এবং ফারাক্কা সমস্যা

টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পে বাংলাদেশ আপত্তি তুলেছে, তবে ভারতের পরিকল্পনা ছাড়া এই ধরনের প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ফারাক্কা বাঁধের কারণে পশ্চিমবঙ্গের মালদা ও মুর্শিদাবাদে বন্যা এবং নদী ভাঙনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, যা লাখো মানুষের দুর্ভোগের কারণ।

 বন্যার ইতিবাচক দিক

বন্যার উল্লেখযোগ্য কোনো ইতিবাচক নেই বললেই চলে। তবে কিছু ইতিবাচক দিক নিম্নরুপঃ

ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্ভরণ

বন্যার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পুনরায় পূর্ণ হতে পারে, যা শুষ্ক অঞ্চলে পানির সংকট কমাতে সাহায্য করে।

মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি

বন্যার পর নদীর তলদেশে নতুন পলি জমা হয়, যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এটি কৃষিকাজের জন্য উপকারী হতে পারে।

প্রানীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ

বৃষ্টিহীন বা কম বৃষ্টিপাতের অঞ্চলগুলোতে বন্যা প্রানীবৈচিত্র্যের সংরক্ষণে ভূমিকা পালন করে।

শহর অঞ্চলে বন্যার ক্ষতিঃ

শহর অঞ্চলে বন্যার কোনো ইতিবাচক দিক নেই।নদীর  দুইপাশে শহর রক্ষার বাধ দেওয়া,বিশেষ খাল নদী দখলমুক্ত  রাখা, ভরাট না করা, শহরের ড্রেইন গুলো প্রসস্ত রাখা এবং বন্যা থেকে জানমালের নিরাপত্তার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া

নদীর নাব্যতা হ্রাসঃ

বাংলাদেশের নদীগুলো দ্রুত নাব্যতা হারাচ্ছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীর উৎপত্তি দেশের বাইরে হওয়ায় এবং উজানের দেশগুলোর পানির অপব্যবহার ও আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশের নদীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।


সর্বোপরি, বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও এটি সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বাংলাদেশের মতো নদীমাতৃক দেশে বন্যার সমস্যা সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, পূর্বপ্রস্তুতি, এবং স্থানীয় উদ্যোগের প্রয়োজন। বন্যার ইতিবাচক দিকগুলো যেমন মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পুনর্ভরণ, তেমনই নেতিবাচক দিকগুলো যেমন শহর অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি ও খাদ্য সংকট নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে।

FAQs

  1. বাংলাদেশে বন্যা কেন ঘটে?

    অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা অতিক্রম করা, এবং ভারতের পানি ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশে বন্যা ঘটে।

  2. ১৯৮৮ সালের বন্যা কতটা ভয়াবহ ছিল?

    ১৯৮৮ সালের বন্যায় বাংলাদেশের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল, যা দেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় বন্যা ছিল।

  3. বন্যার ইতিবাচক দিকগুলো কী কী?
    বন্যার ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পুনর্ভরণ, এবং প্রানীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্ভব হয়।

  4. বন্যা থেকে শহর রক্ষার উপায় কী?

    নদীর দুই পাশে রক্ষা বাঁধ তৈরি, খাল ও নদী দখলমুক্ত রাখা, এবং ড্রেনগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে শহরকে বন্যা থেকে রক্ষা করা যায়।

  5. ভারতের পানি আগ্রাসন কেন বাংলাদেশে বন্যার কারণ?
    ভারতের একতরফা বাঁধ নির্মাণ এবং পানির অপব্যবহার বাংলাদেশে বন্যার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি।

Previous Post Next Post

Recent Posts

Magspot Blogger Template

نموذج الاتصال